অনলাইন ডেস্ক ::
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর- ডিসেম্বর দুই মাসে দলের গুম হওয়ার নেতাকর্মীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গুম-নিখোঁজ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ তালিকা প্রকাশ করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি তালিকাটি প্রকাশের সময় অভিযোগ করে বলেন, মানবাধিকার সংস্থা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্য মতেÑ ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫২ জনের এখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ২৭জন বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে গুম ও নিখোঁজদের তালিকা চেয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের আগের দুই মাসে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের ৫০জন নেতাকর্মী। পরে যাদের আর খোঁজ মেলেনি। যাদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রিজভী বলেন, নিখোঁজ নেতাকর্মীদের পরিবারগুলো সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। পুলিশ, র্যাব, ডিবি, কার্যালয়ে গিয়ে ধরনা দিয়েছে। প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম তানভীর, পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান সোহেল, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুর বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজি ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের হতভাগ্য পরিবার। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ও তার সন্তানরা এখনও ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছেন। বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতি গুম হওয়া আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন ছেলের অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অসুস্থ হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা জানতেও পারেননি তারা এখন জীবিত নাকি মৃত। পিতার অপেক্ষায় তার সন্তান, স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, সন্তানের অপেক্ষায় মা-বাবা। এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। বুকভরা বেদনা নিয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ পান না। তাদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল কাদেরদের চোখের পানি ঝরবে না। কারন ক্ষমতার জৌলুসে রক্তাক্ত অনাচারগুলো না দেখারই কথা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এগুলোর বিষয়ে কী কোন জবাব দিতে পারবেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীদের চোখে পানি না এলেও গুম হওয়া, খুন হওয়া, নির্যাতনের শিকার হওয়া স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন বাংলাদেশ ভাসছে। রিজভী বলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৭০ দিন গুম করে রাখার ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ফেলে আসা হয়। আন্তর্জাতিক সমস্ত আইন-কানুনকে উপেক্ষা করে একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত কী করে আরেকটি দেশের দু:শাসন ও অন্যায়ের অংশীদার হতে পারে, তা আজ সারাবিশ্বের মানুষের প্রশ্ন। সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট লেখক, কলামনিস্ট, কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, শোনা যাচ্ছেÑ মানুষজন ও আত্মীয়-স্বজনদের চিনতেও নাকি কষ্ট হচ্ছে তাঁর। অথচ তাঁর অপহরণ ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু সরকারি কোন চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনায় সাজানো নাটক মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেনÑ ‘বিএনপি নেতারা এখন প্রেস ব্রিফিং করে আর কাঁদে, আর কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।’ কিন্তু আপনাদের নেতাকর্মীদের লুটপাটের টাকায় সুইস ব্যাংক জোয়ারের পানির মতো উপচে উঠেছে। তাই অন্যের আহাজারীতে আপনাদের মনে আনন্দ ধরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। আর আওয়ামী নেতারা মানুষের দু:খ-বেদনা ও কান্না নিয়ে উপহাস করছে। গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের বেদনার্ত কান্নার আওয়াজ সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কারও কানে প্রবেশ করে না। রিজভী বলেন, হবিগঞ্জ সদর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আরব আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের এবং তাকে আদালতে হাজির করছে না। ফলে তার ওপর পুলিশী অত্যাচার বা প্রাণনাশের আশংকা করছে তার পরিবার। আমি অবিলম্বে তাকে আদালতে হাজির করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
সুত্র ; মানবজমিন।
পাঠকের মতামত: